বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:০৭ অপরাহ্ন
Reading Time: 3 minutes
হারুন উর রশিদ সোহেল, রংপুর :
রংপুর মহানগর বিএনপির আহবায়ক কমিটির সদস্য ও শহর কমিটির সাবেক সভাপতি কাওছার জামান বাবলা ও তার শ্বশুড় জামাল মিয়ার বিরুদ্ধে অবৈধভাবে বসতভিটা দখল চেষ্টার অভিযোগ তুলেছেন মাহিগঞ্জ ফতেপুর এলাকার বাসিন্দা হোমিও চিকিৎসক ও শিক্ষানবিশ আইনজীবী মানিক অধিকারীর সহধর্মীনি শিখা রাণী অধিকারী। এ ঘটনায় তিনি ন্যায় বিচার নিশ্চিতে প্রশাসন, আইন-আদালতসহ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের নেতাদের সহযোগিতা চেয়েছেন।
মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) দুপুরে রংপুর রিপোর্টার্স ক্লাব মিলনায়তনে ‘আইন ও অধিকার ফাউন্ডেশন ও ভুক্তভোগী পরিবারের’ ব্যানারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিখা রাণী অধিকারী এ অভিযোগ তুলে ধরেন। এসময় শিখা রাণী অধিকারীর দুই শিশুসন্তান, ননদ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন আইন ও অধিকার ফাউন্ডেশনের রংপুর বিভাগীয় সভাপতি সিরাজুল ইসলাম পাটোয়ারী, ফাউন্ডেশনের কেন্দ্রীয় সহকারী পরিচালক অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম পাটোয়ারী, রংপুর জর্জ কোটের আইনজীবী শান্তি রানী বর্মণ, ফাউন্ডেশনের রংপুর জেলার কোষাধ্যক্ষ সনাতন সরকার, পীরগাছা উপজেলার সাধারণ সম্পাদক আসাদুল ইসলাম প্রমুখ। লিখিত বক্তব্যে শিখা রাণী অধিকারী বলেন, ৫২ বছর আগে ১৯৭২ সালে যৌথভাবে ৩৬ শতাংশ জমি ক্রয় করেন তার শ্বশুড় ডা. মধুসূদন অধিকারী ও জ্যাঠা শ্বশুড় মহেন্দ্রনাথ অধিকারী। সেই জমিতে তার শ্বশুড় বসতবাড়ি রয়েছে এবং সেখানে শান্তিপূর্ণভাবে বসবাস করে আসছে। অপরদিকে জ্যাঠা শ্বশুর মহেন্দ্র নাথ অধিকারী চাকুরির সুবাদে রাজশাহীতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।
তিনি আরও বলেন, গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর কাওছার জামান বাবলা আমাদের বসবাস করা ওই জমি তিনি ক্রয় করেছেন বলে আমাদেরকে জানান। এবং দ্রুত সময়ের মধ্যে জমি থেকে বাড়ি খালির জন্য নির্দেশ দেন। এর তিনদিন পর ৮ সেপ্টেম্বর কাওছার জামান বাবলাসহ তার শ্বশুড় জামাল মিয়ার উপস্থিতিতে সার্ভেয়ার দিয়ে জমি পরিমাপ করতে এসে ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে তান্ডব চালিয়ে জমিতে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির গাছ কেটে ক্ষতিসাধন করেন। ওই জমি বাবলা ৫৩ লাখ ৪৫ হাজার টাকা দিয়ে কিনেছেন দাবি করে দলিলের ফটোকপি দেন। পরবর্তীতে আমরা রংপুর সদর সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে খবর নিয়ে জানতে পারি, ৩১ লাখ ২ হাজার টাকা বেশি দেখিয়ে ভুয়া দলিল তৈরি করা হয়েছে। আসল দলিলে জমির মূল্য ২২ লাখ ৪৩ হাজার টাকা রয়েছে। শিখা রাণী অধিকারী বলেন, বাবলা ও জামাল মিয়ার বিরুদ্ধে আইনি সহায়তা পেতে ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর আমার শ্বশুড় ডা. মধুসূদন অধিকারী বাদী হয়ে ১৯৪৯ সালের অকৃষি প্রজাস্বত্ব আইনের ২৪ ধারার বিধানমতে অগ্রক্রয় এর নিমিত্তে মামলা করেন। এ মামলাটি দায়ের করার পর থেকেই বাবলা তার ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে আমাদের পরিবারকে হুমকি-ধামকি দিয়ে আসছে। এরই মধ্যে ওই বছরের ৪ অক্টোবর আদালতে শুনানি শেষে প্রতিপক্ষকে বে-আইনিভাবে নালিশী সম্পত্তিতে অনুপ্রবেশ করে ঘর বাড়ি নির্মাণ কিংবা আকার আকৃতি পরিবর্তন না করার জন্য আদেশ প্রদান করেন। এবং একই বছরের ২৯ অক্টোবর দুই পক্ষের শুনানি অন্তে আদালত মামলা নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বা পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নালিশী সম্পত্তির আকার, আকৃতি ও প্রকৃতির উভয়পক্ষকে স্থিতিবস্থা বজায় রাখার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। বর্তমানে মামলাটি আদালতে চলমান আছে।
জুলাই বিপ্লব ও গণঅভ্যুত্থানের পর থেকে কাওছার জামান বাবলা রাজনৈতিক শক্তির ব্যবহার ও ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের দিয়ে হুমকি-ধামকি অব্যাহত রেখেছে দাবি শিখা রাণী আরও বলেন, আমাদেরকে বসতভিটা থেকে উচ্ছেদ করে জমি দখলের চেষ্টা থেকে গত ১৩ আগস্ট সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে তান্ডব চালিয়ে বাড়ির সিসি ক্যামেরা ভাংচুর করে, টিন দিয়ে ঘেরা বাড়ির বাউন্ডারি ভেঙ্গে বাড়িতে লুটপাটের চেষ্টা করেন। ওইদিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঘটনাস্থলে দ্রুত পৌঁছলে বাবলার ভাড়াটে সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঠেকাতে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের পরামর্শে মাহিগঞ্জ থানায় এজাহার দিলে অজ্ঞাত কারণে তা রেকর্ড করেনি তৎকালীন ওসি। ওইদিন মাহিগঞ্জ থানাসহ অত্র এলাকার অসংখ্য বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীরা আমাদের বাড়ি পরিদর্শন করে সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান।
তিনি আরও বলেন, প্রতিপক্ষ কাওছার জামান বাবলা বাদি হয়ে গত ১২ আগস্ট আমার শ্বশুর ও স্বামীসহ পরিবারের ৪ জনের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা করেন। আদালত মাহিগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা বরাবরে দখলস্বত্ত প্রতিবেদন দাখিলের আদেশ প্রদান করেন। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক মাহিগঞ্জ ইউনিয়ন ভূমি অফিসের ভারপ্রাপ্ত সহকারী ভূমি কর্মকর্তা হামিদুল ইসলাম সরেজমিন পরিদর্শনকালে আমাদের রান্নাঘর, গোয়ালঘর, বাথরুম, ল্যাটিন, বায়োগ্যাস প্লান্ট, সবজি ক্ষেত, সুপারি বাগান, কলাগাছ, পেপেগাছ, গরুর গোবরের ঢিপিসহ স্থায়ীভাবে বাড়ির আভ্যন্তরীণ অংশ হিসেবে দেখে বুঝেও অনৈতিক সুবিধা হাসিলের উদ্দেশ্যে বিএনপি নেতা কাওছার জামান বাবলার দখল দেখিয়ে ৮ সেপ্টেম্বর আদালতকে বিভ্রান্তিকর প্রতিবেদন দাখিল করেন। এই বাবলা-জামালের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আজ আমরা অভিভাবকহীন হয়ে পড়েছি। আমার ছোট শিশু সন্তান আজ তার বাবার স্নেহ থেকে বঞ্চিত। বাবলা-জামাল ষড়যন্ত্র করে আমার স্বামী মানিক অধিকারীকে বিভিন্ন মামলায় মিথ্যা অভিযোগে আসামি করে আসছে। আমার স্বামী কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে জড়িত নন। তার (মানিক অধিকারী) কোনো অবৈধ অর্থ-সম্পদ নেই। কারো সঙ্গে কখনো প্রতারণাও করেনি। অথচ আমার স্বামীকে নিয়ে মিথ্যাচার করা হচ্ছে। কাওছার জামান বাবলার ব্যাপারে তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের একটু নজর দিতে আহ্বান জানান এই ভুক্তভোগী নারী।
এদিকে এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিএনপি নেতা কাওছার জামান বাবলা বলেন, যেসব কথা বলা হয়েছে, তা মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। তাদের কাছে জমির প্রকৃত কাগজপত্র নেই। আমি কোনো ভূয়া কাগজপত্র দেখাইনি। ওদেরকে প্রমাণ করতে হবে এই জমির মালিক কে?
আমার বিরুদ্ধে অগ্রক্রয় এর নিমিত্তে মামলা করেছে, সেটা তো আদালতে চলমান রয়েছে। বরং আমি বিগত সরকারের সময়ে জেলে থাকা অবস্থায় ওরা আমার ক্রয় করা জমি দখলে নিতে টিন দিয়ে ঘিরে রেখেছে।
দলীয় প্রভাব বিস্তারের অভিযোগ নিয়ে তিনি বলেন, আমি বিএনপির প্রভাব দেখাইনি। ওরা তো মিথ্যা কথা বলতেছে। আমি নাকি আমার শ্বশুড়ের পাওয়ার দেখাইছি। আমাকে অন্যের পাওয়ারে চলতে হয় না। আমি যদি সত্যিকার অর্থে পাওয়ার দেখাতাম তাহলে তো অনেক কিছুই করতে পারতাম। ওরা দুই ভাই মুখোশধারী। আমি যদি অপরাধী হই, মিথ্যা কাগজপত্র দিয়ে জমি দখলের চেষ্টা করে থাকি সেটা ওরা প্রমাণ করুক, তাহলে তো আমার শাস্তি হবে।
এরআগে রংপুর প্রেসক্লাবে গত ১৯ অক্টোবর আইনজীবী মানিক অধিকারীর বিরুদ্ধে জমিসংক্রান্ত বিরোধের জেরে সাম্প্রদায়িক উসকানি দেওয়ার অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেন রংপুর মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য ও শিল্পপতি কাওছার জামান বাবলা।